ধর্ম ও জীবন:
ইসলামী শরিয়তের বিধান হলো- পায়খানা বা প্রস্রাব করার সময় কেবলার দিকে মুখ করে বা পিঠ দেওয়া যাবে না। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কেবলার দিকে মুখ করে বা পিঠ দিয়ে প্রস্রাব-পায়খানা করলে সে গুনাহগার হবে। একইভাবে কেবলার দিকে ফিরে সহবাস করাও নিষিদ্ধ। ইসলামী শরিয়তের এই বিধানের রহস্য হলো, আল্লাহর ঘর ও নিদর্শনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন তোমাদের কেউ পায়খানা-প্রস্রাব করে, তখন যেন সে কেবলার দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে না বসে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৯৪)
প্রজ্ঞাবান আলেমরা এই শরয়ি বিধানের তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। তা হলো :
১. কাবাঘর আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম। কাবাঘরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার শামিল। আর কাবাঘরের প্রতি অসম্মান মহান স্রষ্টার প্রতিই অসম্মন। এ জন্যই আল্লাহ কাবাঘরের তাওয়াফ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কাবার দিকে ফিরে নামাজ আদায় করতে বলেছেন। আর তা করতে বলেছেন পূতঃপবিত্র অবস্থায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনাবলির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল, নিশ্চয়ই তা অন্তরে বিদ্যমান আল্লাহভীতির অনুকূল।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩২)
২. যে ঘরকে আল্লাহ নিজের বলে ঘোষণা করেছেন এবং যেদিকে ফিরে মানুষকে ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছেন, সেদিকে ফিরে প্রস্রাব-পায়খানা করা সুনিশ্চিত বেয়াদবি। এতে মহান আল্লাহ ক্ষুব্ধ হন। কেননা পৃথিবীর কোনো রাজা-বাদশাহ ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিও তার ঘরের দিকে ফিরে পায়খান-প্রস্রাব করার অনুমতি দেবে না। এই বেয়াদবির কুফল হলো, এর ফলে ব্যক্তির অন্তর থেকে ধীরে ধীরে আল্লাহর সম্মান ও মর্যাদা লোপ পাবে এবং সমাজের ওপরও তার কুফল পড়বে। কোনো একজন কবি বলেছেন, ‘বেয়াদব ব্যক্তি শুধু নিজেকেই শুধু ধ্বংস করে না; বরং পৃথিবীর কোনায় কোনাই তার আগুন ছড়িয়ে দেয়।’
৩. ঈমানের দাবি হলো, মুমিনের অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও মর্যাদা বিরাজ করবে এবং তার আচার-আচরণেও তা প্রকাশ পাবে। যেন তার ভেতর ও বাইরের মধ্যে মিল থাকে। এখন কোনো ব্যক্তি যদি মুখে ঈমানের দাবি করে এবং কেবলার দিকে ফিরে মল-মূত্র ত্যাগ করে, তবে সে দাবি মিথ্যা ছাড়া কিছুই না। কেননা তাঁর দাবির সঙ্গে আচরণের কোনো মিল নেই। এটা সুস্পষ্ট মুনাফিকি।
‘আহকামে ইসলাম আকল কে নজর মে’ অবলম্বনে