আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইউরোপের মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র তুরস্কের মধ্যাঞ্চলে ৫ দশমিক ৬ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প মঙ্গলবার আঘাত হেনেছে। তুরস্ক ও সিরিয়ায় গতকাল সোমবার তিনটি ভূমিকম্প আঘাত হানার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষ নিহত হয়। আরও হাজার হাজার আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের সন্ধানে বিভিন্ন অঞ্চলে উদ্ধার অভিযান চলছে।
ইউরো-ভূমধ্যসাগরীয় সিসমোলজিক্যাল সেন্টারের (ইএমএসসি) বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৬। ভূমিকম্পটি ২ কিলোমিটার গভীরে ছিল।
আর মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ বলছে, তুরস্কের গোলবাসি শহরের কাছে ১০ কিলোমিটার (৬ মাইল) গভীরে ৫ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। সোমবার সংগঠিত প্রথম ভূমিকম্পের পর বেশ কয়েকটি আফটারশক হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল।
মিশিগান টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটির ব্যবহৃত ভূমিকম্পের স্কেল অনুসারে, ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে ভবন ও অন্যান্য অবকাঠামোর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দুটি ভূমিকম্পের পর ২৪৩টি আফটারশক হয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান ইউনুস সেজার। এ সময় তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ১৬ হাজার ৪০০ উদ্ধারকর্মী কাজ করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে, স্থানীয় সময় সোমবার সকালে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর থেকে ৪ বা তার বেশি মাত্রার অন্তত ১০০টি আফটারশক হয়েছে। মূল ভূমিকম্পের সময় যত বাড়ে, আফটারশকের তীব্রতা তত কমতে থাকে।
যদিও ৫ থেকে ৬ মাত্রা বা তারচেয়ে বড় আফটারশক এখনো ঘটতে পারে। এগুলো মূল ভূমিকম্পের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কাঠামোর অতিরিক্ত ক্ষতির ঝুঁকি নিয়ে আসে। এটি উদ্ধারকারী দল ও জীবিতদের জন্য হুমকি স্বরূপ। আফটারশকগুলো দক্ষিণ তুরস্কের ফল্ট জোন বরাবর ৩০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে হচ্ছে।
ভূমিকম্পে দক্ষিণ তুরস্কের ১০টি প্রদেশের এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যে তুরস্কেই মারা গেছেন দুই হাজার ৯২১ জন। আর সিরিয়ায় এক হাজার ৪৪৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দুই দেশে আহত হয়েছেন ১৭ হাজারের বেশি মানুষ।
তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দেশটির বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, তুরস্কে মৃতের সংখ্যা কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুই হাজার ৩৭৯ থেকে বেড়ে দুই হাজার ৯২১ জনে পৌঁছেছে।
তুর্কি ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতাই বলেছেন, তুরস্কের ১০টি প্রদেশে ১৪ হাজার ৪৮২ জন আহত হয়েছেন এবং সাত হাজার ৮৪০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রায় তিন লাখ ৩৮ হাজার মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমেটরি ও অন্যান্য স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
সিরিয়ায় সর্বশেষ এক হাজার ৪৪৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুই দেশ মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা চার হাজার ৩৬৫ জনে পৌঁছেছে।
এ দিকে ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় তীব্র ঠাণ্ডার মধ্যে বহু মানুষকে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয়েছে। আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণে অনেক মানুষকে জটলা হয়ে বসে থাকার ছবিও তুলে এনেছে আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো।
উল্লেখ্য, তুরস্কে এবারের ভূমিকম্পে অন্তত পাঁচ হাজার ৬০৬টি ভবন ধ্বংস হয়েছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গাজিয়ানতেপ শহরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ওই ভূমিকম্পের পর আরও অন্তত ৭৭টি আফটারশক (পরাঘাত) অনুভূত হয়, যার মধ্যে তিনটি ছিল রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার বেশি। আবার একটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫।
এ দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্ধারকারী দল তুরস্কে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তুরস্ককে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়াও জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), এশিয়ার পরাশক্তি চীনসহ বিশ্বের বহু ক্ষমতাধর দেশ সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।