অনলাইন ডেস্ক:
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের অধীনে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার মূল রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। সম্প্রতি যশোর থেকে তোলা। ছবি : সংগৃহীত
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা দিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেন চলাচল করছে। তবে এই নতুন রেলপথে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চালানো প্রকল্পের লক্ষ্য। চলতি বছরের জুনের মধ্যে ট্রেন চালাতে চায় সরকার। সে লক্ষ্যে কাজের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
তবে এর মধ্যে প্রকল্পের পক্ষ থেকে আরো এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
পদ্মা পেরিয়ে ৫ মাস পরই যশোরে ট্রেনগত ১ ফেব্রুয়ারি পুরো পথে রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। পুরো প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ। প্রকল্পের মোট ১৬৯ কিলোমিটার পথে রেললাইন এখন দৃশ্যমান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অবকাঠামোগত কাজ প্রায় শেষ হয়ে এলেও কারিগরি কাজ বাকি থাকায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়তে পারে। এ ছাড়া প্রকল্প চালু হলেও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে অতিরিক্ত সময় দরকার। তবে আগামী জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ট্রেন চালু করা সম্ভব হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মাঝের সব স্টেশনে ট্রেন থামার সুযোগ থাকবে না।
প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব
মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে রেলপথ মন্ত্রণালয় হয়ে পরিকল্পনা কমিশনা জমা পড়েছে। কমিশনের একটি দল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছে। মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব শিগগির অনুমোদিত হতে পারে।
তবে আগামী জুন বা জুলাই থেকে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি অনেকটা চূড়ান্ত বলে জানান সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কর্মকর্তা। তিনি জানান, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে অবকাঠামোর কাজ শেষ হবে।
শেষ সপ্তাহে পুরো পথে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানো হবে। জুনে সম্ভব না হলেও জুলাইয়ে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালানো হবে।
গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৮ শতাংশ। এখন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আগামী জুনে ট্রেন চালানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু প্রকল্প কর্তৃপক্ষের ভাবনা আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ট্রেন চলাচল শুরু করা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) মামুনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে চাই। এই সময়ের মধ্যে যাতে ট্রেন চালানো যায়, সেই প্রস্তুতিতেই কাজ চলছে।’
রেলওয়ের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলা দিয়ে যশোরের সঙ্গে রেল নেটওয়ার্ক যুক্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে ভাঙ্গা থেকে পাচুরিয়া-রাজবাড়ী সেকশনটি পদ্মা সেতু হয়ে সরাসরি ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে রেলপথে ঢাকার সঙ্গে খুলনার দূরত্ব ৪৬০ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু দিয়ে নতুন রেলপথটি চালু হলে দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার।
শেষ মুহূর্তে সময় কেন বাড়ছে
রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হলেও লুপ লাইনের কাজ প্রায় পুরোটা বাকি। রেলের লাইনের জোড়া দেওয়ার (ওয়েল্ডিং) কাজও বাকি রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্তরে পাথর ফেলা, স্টেশন ভবন এবং যোগাযোগ ও সংকেতের কাজ বাকি রয়েছে। ঠিকাদারদের কাজের সম্ভাব্য ত্রুটি শনাক্ত করতেও অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, বড় কাজ শেষ হয়ে গেলেও খুঁটিনাটি অনেক কাজ বাকি থাকবে। সেগুলো ট্রেন চালু হওয়ার পরও করা যাবে। আবার নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর জনবল পদায়ন করাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এক প্রশ্নের জবাবে আফজাল হোসেন বলেন, সংকেতের কাজ বাকি থাকায় শুরুতেই হয়তো সব স্টেশনে ট্রেন থামানো সম্ভব হবে না। সে ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলো অগ্রাধিকার পাবে।
যশোরের পথে সংকেতের কাজ বেশি বাকি
পুরো প্রকল্পের কাজকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে : ঢাকা-মাওয়া, মাওয়া-ভাঙ্গা ও ভাঙ্গা-যশোর। প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে নথির তথ্য বলছে, গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম অংশে ৮৯ শতাংশ কাজ হয়েছে, শেষ অংশের কাজ করেছে ৮৮.৬৫ শতাংশ। আর মাঝের অংশের কাজ হয়েছে সবচেয়ে বেশি, ৯৮.২৫ শতাংশ। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৮ শতাংশ। দুই অংশের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা এখন ট্রেন চলছে। বাকি অংশের ভাঙ্গা থেকে যশোর পথে বেশি কাজ বাকি আছে নতুন স্টেশন ভবনের সংকেত স্থাপনের ক্ষেত্রে। এই খাতে কাজ হয়েছে মাত্র ৫৮ শতাংশ।
এই পথের মোট ২০টি স্টেশনের মধ্যে ১৪টিই নতুন নির্মাণ করা হচ্ছে। আর বিদ্যমান ছয়টি স্টেশন সংস্কার করে আধুনিক করা হচ্ছে। এই স্টেশনগুলোর কাজ শেষ হয়েছে ৭৫.৪২ শতাংশ। এ ছাড়া বিভিন্ন স্তরে পাথর ফেলার কাজ শেষ হয়েছে ৮৮.০২ শতাংশ। অবকাঠামোর অন্যান্য কাজ প্রায় পুরোপুরি শেষ।
বাড়ছে না খরচ
প্রকল্পের আরো এক বছর সময় বাড়লেও খরচ বাড়ানো হচ্ছে না। ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মীয়মাণ পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ লাখ টাকা দিচ্ছে সরকার। বাকি ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের তালিকাভুক্ত করা হয়।