অনলাইন ডেস্ক:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ। বিকালে বসছে সংসদের প্রথম অধিবেশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রার দিনে সংসদ নির্বাচন বাতিলের দাবিতে সারা দেশে আজ বিএনপি কালো পতাকা মিছিল করবে। পাল্টা কর্মসূচি দিলেও আওয়ামী লীগের পূর্বনির্ধারিত আজকের শান্তি ও গণতন্ত্র সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আজ বিকাল ৩টায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। এটি ২০২৪ সালেরও প্রথম অধিবেশন। সংসদীয় রীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাষ্ট্রপতি প্রতি বছর সংসদের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দেন। এর আগে, রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৭২(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ২০২৪ সালের প্রথম সংসদ অধিবেশন আহ্বান করেন। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আসন বিন্যাসের কাজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই অধিবেশনে বেশ কয়েকটি বিল উত্থাপন হওয়ার কথা রয়েছে বলে সংসদ সচিবালয় জানায়।
এদিন সংসদের কার্যপ্রণালি শুরুর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদীয় কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে অধিবেশনের কার্যকাল ও আলোচ্যসূচি ঠিক করা হবে। সংসদে একাদশ সংসদের মতোই এবারও বিরোধী দল হিসেবে থাকছে জাতীয় পার্টি। এর পাশাপাশি ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রয়েছেন দ্বাদশ সংসদে। জাতীয় পার্টির পাশাপাশি সংসদে বিরোধী ভূমিকায় থেকে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করার সুযোগ রয়েছে স্বতন্ত্র এমপিদের। অধিবেশনের প্রথম দিনেই স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি। এরপর নতুন সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে প্রথমবারের মতো ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। পরে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেবেন সদস্যরা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ভোট হওয়া ২৯৯টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৩টি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি আসনে জয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি পেয়েছে ১টি করে আসন। স্থগিত হওয়া নওগাঁ-২ আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি।
সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, গতকাল ২৯ জানুয়ারি, সোমবার একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) থেকে অধিবেশনের মাধ্যমে দ্বাদশ সংসদের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে। নতুন সংসদের প্রথম দিনের অধিবেশনে প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা, দেশি-বিদেশি কূটনীতিক, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তাসহ প্রায় ৫ শতাধিক অতিথি উপস্থিত থাকবেন।
আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ স্থগিত : আজ দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের দিনে পূর্বনির্ধারিত শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি স্থগিত করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। গতকাল ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক প্রলয় সমদ্দার বাপ্পি স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, অনিবার্য কারণে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ‘শান্তি ও গণতন্ত্র’ সমাবেশটি সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশক্রমে স্থগিত করা হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ৩০ জানুয়ারি বিএনপির কালো পতাকা মিছিলের পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে ‘শান্তি ও গণতন্ত্র’ সমাবেশের ঘোষণা করেছিলেন।
বিএনপির কালো পতাকা মিছিল আজ : আজ (মঙ্গলবার) সারা দেশে কালো পতাকা মিছিল করবে বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকায় নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এ কর্মসূচির আয়োজন করবে। বেলা ২টায় রাজধানীর ৭টি এলাকা থেকে একযোগে এই মিছিল বের করা হবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি চারটি এবং মহানগর উত্তর বিএনপি তিনটি স্থান থেকে এই মিছিল বের করবে। এর মধ্যে মহানগর দক্ষিণের স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে, মতিঝিল পীরজঙ্গি মাজারের সামনে, ধানমন্ডি নিউমার্কেটের সামনে, যাত্রাবাড়ী কদমতলী বাসস্ট্যান্ড এবং সূত্রাপুরের দয়াগঞ্জ মোড়। মহানগর উত্তর বিএনপির স্থানগুলো যথাক্রমে- শাহজাদপুর সুবাস্তু নজর ভেলির সামনে, উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর কবর স্থানের সামনে এবং মিরপুর ৬ নম্বর সেকশন মসজিদের সামনে থেকে। দুই দিনের কর্মসূচি শেষে গত ২৬ জানুয়ারি ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচন ও দ্বাদশ সংসদ’ বাতিলসহ ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের’ দাবিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সারা দেশে আজকের এই কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সারা দেশে জেলা, উপজেলা ও মহানগরীতে একযোগে এই কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি।
৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গত ২৫ ও ২৬ জানুয়ারি জেলা ও মহানগরী পর্যায়ে দুই দিনের এই কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। নির্বাচনের পর এটিই ছিল বিএনপির রাজপথের প্রথম কর্মসূচি। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং অবৈধ সংসদ বাতিলসহ একদফা দাবি আদায়ে এই কালো পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। আজ বেলা ১১টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কালো পতাকা মিছিল শুরু হবে। এ ব্যাপারে ডিএমপিকে চিঠি দেওয়ার পর মৌখিকভাবে অনুমতি পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়াও ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে জাতীয় প্রেস ক্লাব সামনে, ‘১২ দলীয় জোট’ বেলা ৩ টা ৩০ মিনিটে বিজয়নগর পানির ট্যাংক সামনে থেকে, ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’ বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব সামনে থেকে, ‘গণ ফোরাম ও পিপলস পার্টি’ বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে বিজয়নগর পানির ট্যাংক সামনে থেকে, ‘এলডিপি’ বেলা ১১টায় পল্টন মোড় থেকে, গণঅধিকার পরিষদ-নুরুল হক নূর বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে বিজয়নগর পানির ট্যাংক সামনে থেকে, ‘গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য’ বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে তোপখানা রোড মেহেরবা প্লাজা সামনে থেকে, ‘বাংলাদেশ লেবার পার্টি’ বেলা ১১টায় পুরানা পল্টন আলরাজী কমপ্লেক্সের সামনে থেকে, ‘এবি পার্টি’ বেলা ৩টা মিনিটে বিজয়নগর দলীয় অফিসের সামনে থেকে এই কালো পতাকা মিছিল বেল করবে।