অনলাইন ডেস্ক:
রাজধানীতে ওলামা লীগের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
পাঁচ বছর আগে বিপিএল নিষিদ্ধ এবং বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন বাতিলের দাবি তোলার পর ‘ওলামা লীগের’ বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে আলোচনায় আসা সেই ওলামা লীগকে এবার কাছে টানল ক্ষমতাসীন দলটি।
শনিবার (২০ মে) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সংগঠনটির প্রথম ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা ওলামা লীগকে একটি সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত এবং নীতি-আদর্শের প্রতি অনুগত বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের সৈনিক সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। শেখ হাসিনার পরীক্ষিত সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
ওলামা লীগ নামে একাধিক সংগঠন রাজধানীতে দীর্ঘদিন ধরেই কর্মসূচি চালিয়ে আসছে। সংগঠনটিকে ঘিরে নানা বিতর্কও আছে। তবে, এর আগে আওয়ামী লীগের স্বীকৃতি না পাওয়ায় তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের দায় কখনো নেয়নি ক্ষমতাসীনরা।
২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে যখন মসজিদে সামাজিক দূরত্ব মেনে সীমিত পরিসরে জামাতে নামাজ আদায়ের নির্দেশনা ইসলামিক ফাউন্ডেশন দিয়েছিল, তাকে ‘কুফুরি মতবাদ’ আখ্যায়িত করে ওলামা লীগ মানববন্ধন করেছিল। তারও আগে ২০১৯ সালে বিপিএল নিষিদ্ধ এবং বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধনের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওলামা লীগের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছিলেন।
পাচঁ বছর পর সেই আবদুস সোবহান গোলাপই এখন ওই সংগঠনের সমন্বয়কের দায়িত্বে, বিশেষ অতিথির চেয়ারে! তার ভাষায়, ‘এতদিন ওলামা লীগ বিভিন্ন ধারায় চলেছে, বিতর্কিতভাবে চলেছে। আওয়ামী লীগ এক কথা বলছে, পেছন থেকে অন্যরা অন্য কথা বলেছেন।’
এখন বিরোধী কথা-বার্তা বলা যাবে না, জানিয়ে ওলামা লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা একসাথে চলি, আওয়ামী ওলামা লীগ। শেখ হাসিনার সরকার যে কথা বলবে, তার সঙ্গে মিলিয়ে আপনাদের কথা বলতে হবে। বিরোধ করা যাবে না।’
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে অনুমতি নিয়ে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে, আপনারা লাকি (ভাগ্যবান)।’
‘বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে চোখ-কান খোলা রেখে রাজপথে থাকতে হবে। কোনো ষড়যন্ত্র যাতে শেখ হাসিনার সরকারকে হঠাতে না পারে, সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে।’
শনিবার ওলামা লীগকে স্বীকৃতি দেওয়ার সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যারা রাজপথের আন্দোলনে ছিলেন, পুলিশের আক্রমণের মুখেও রাজপথ ছাড়েননি এবং নেত্রীর নির্দেশ অমান্য করেননি; দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল, তারা সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠিত হবেন। সময় লেগেছে, তবে তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।’
‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে এই সম্মেলন হচ্ছে। যেহেতু প্রথম সম্মেলন, সেজন্য কতজনকে নিয়ে কমিটি হবে, কিভাবে কমিটি পরিচালিত হবে… আমাদের একটা রাজনীতি আছে, সেই রাজনৈতিক আদর্শের প্রতিফলন থাকবে। গঠনতন্ত্রও থাকতে হবে। নেতাকর্মীদের আশা ও বাস্তবতার প্রতিফল ঘটিয়ে যেন একটি সুন্দর কমিটি আওয়ামী ওলামা লীগকে উপহার দেওয়া যায়, সেই ব্যাপারে সিনিয়র কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা করে একটি প্রস্তাব নিয়ে আমি নেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তা বাস্তবায়ন করব।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও অন্যান্য পদে যারা আসবেন, তারা গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে কেউ ভবিভ্যষতের নেতৃত্ব। আবার ঢাকা মহানগরে দুটি শক্তিশালী কমিটি করতে হবে।’
‘দলাদলি করবেন না, বদনাম কামাবেন না। ওলামা লীগের নামে চাঁদাবাজি করবেন না। বদনাম যেন না হয়। প্রোগ্রাম করবেন, পয়সা না থাকলে আমাকে বলবেন। নেত্রীকে আমি বলব, আপনাদের খরচ যেটা, নেত্রীই বহন করবেন। কিন্তু, আপনারা চাঁদাবাজি করে দুর্নাম কামাবেন না। এটা অতীতের অনেকেই করেছে। আপনার খুব ভালো করেই জানেন।’
বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগকে আওয়ামী লীগের সহযোগী, না সমমনা দল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেটা নেত্রী ঠিক করবেন।