অনলাইন ডেস্ক:
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, ভেজাল ও নকল পণ্য, পরিমাপে কারচুপি এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে বিএসটিআই।
আজ রবিবার (১০ মার্চ) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান। ‘পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআই গৃহীত বিশেষ কার্যক্রম’ সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার লক্ষ্যে এ প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলমসহ শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থার প্রধান এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা উল্লেখ করে নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘ভেজালকারী ছোট হোক বা বড় হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ এ ছাড়াও রমজানে পণ্যের মান ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে ‘পণ্যের মান প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা’র (বিএসটিআই) ভেজালবিরোধী বিশেষ অভিযানেরও ঘোষণা দেন মন্ত্রী।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘রমজানে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ এবং পণ্যের ওজন ও পরিমাপে কারচুপি রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম আরো জোরদার করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীতে প্রতিদিন তিনটি বিশেষ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
এ ছাড়া জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে বিএসটিআই। একই সাথে, র্যাব ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যৌথ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। এসব কার্যক্রম পরিচালনার সময় অনৈতিকভাবে ব্যবসায়ীরা যাতে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে না পারেন, তা মনিটরিং করবে বিএসটিআই।’
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘আকস্মিকভাবে পরিচালিত অভিযানে রোজাদাররা সচরাচর যে খাবার ও পানীয় গ্রহণ করে থাকেন, সেগুলোর ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হবে।
এ সময় ফলমূল, পানীয়, ফলের সিরাপ, মুড়ি, খেজুর, কোমল পানীয় পাউডার, কার্বোনেটেড বেভারেজ, ভোজ্য তেল, সরিষার তেল, ঘি, পাস্তুরিত দুধ, নুডলস, সেমাই, পানি, ডেক্সট্রোজ মনোহাইড্রেট এবং ইফতারসামগ্রীর মান ও দাম নিয়ন্ত্রণ করা হবে।’
এ সময় তিনি জানান, সারা দেশ থেকে মোট ৬১৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত পরীক্ষা করা হয়েছে ৫৬২টি। যার মধ্যে মানসম্মত নমুনা ৫১১টি, নিম্নমানের নমুনা ৫১টি। এ ছাড়া আরো ৫৪টি নমুনা পরীক্ষাধীন রয়েছে।
নিম্নমানের পণ্য সরবরাহকারীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শোকজের পর ১০টি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের মান উন্নয়ন করে বিএসটিআইকে অবহিত করায় তাদের পণ্য পুনরায় পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, হাইকোর্টের পূর্বের নির্দেশ থাকায় এবং জনস্বার্থ বিবেচনা করে বিএসটিআই ফলমূলে ফরমালিন পরীক্ষা করে থাকে। এ বছর ১৯২টি নমুনা বাজার থেকে ক্রয় করে ফরমালিনের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। তবে কোনোটিতে ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
শিল্পমন্ত্রী উল্লেখ করেন, জুলাই ২০২৩ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত আট মাসে বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও পণ্যের ওজন ও পরিমাপে কারচুপি রোধকল্পে এক হাজার ৫৫৩টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে এক হাজার ৫৪৩টি মামলা দায়ের এবং চার কোটি ৮৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা জরিমানা করে। এ সময়ে ২৩টি কারখানা সিলগালা করা হয় এবং পরিমাপে কম দেওয়ায় পেট্রল পাম্পের ৩৯২টি ইউনিট সিলগালা করা হয়। এ ছাড়া উক্ত সময়ে ড্রিংকিং ওয়াটার, ভোজ্য তেল (ফর্টিফায়েড এডিবল ওয়েল) ও অবৈধ প্রসাধনীর বিষয়ে বিশেষ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।
তিনি জানান, বিএসটিআই পণ্যের হালাল সনদ প্রদান শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ৮৪টি পণ্যের হালাল সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে। বিএসটিআই হালাল সনদ প্রদানকালে ধর্মীয় দিকের পাশাপাশি পণ্যের স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড সেফটির বিষয়টি একদল অডিট টিমের মাধ্যমে যাচাই করে দক্ষতার সাথে দেখে থাকে। যার ফলে বিএসটিআইয়ের হালাল সনদ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
অনলাইনে পণ্য ক্রয়ের পূর্বে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিশ্চিত হয়ে পণ্যের অর্ডার করার পরামর্শ প্রদান করেন শিল্পমন্ত্রী। প্রয়োজনে বিএসটিআইয়ের হটলাইন (১৬১১৯) নম্বরে ফোন দিয়ে নিশ্চিত হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
সূত্র : বাসস