অনলাইন ডেস্ক:
‘সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের যারা জনগণের করের টাকা যারা ব্যয় করেন তাদের অবশ্যই দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। শুধু দায়িত্বশীল হলেই হবে না, কিভাবে এই অর্থ ব্যয় করেন তার জবাবদিহিতাও থাকা উচিত।’ দুই বছর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের ১৩৮ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুল খারিজ করার রায়ে এ পর্যবেক্ষণ এসেছে।
বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
রুল খারিজের আদেশে আদালত বলেন, ‘আইনের দৃষ্টিতে রিট আবেদনটি রক্ষণীয়। যেহেতু বিতর্কিত নিয়োগ প্রক্রিয়াটি পরবর্তীতে বাতিল করা হয়েছে, সুতরাং রুলটি খারিজ করা হলো।’
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালনকালে কোনো উপাচার্য (ভিসি) যদি বেআইনি কাজ করেন বা কোনো উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে, তবে সংশ্লিষ্ট উপাচার্যের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে ২০২১ সালের ৬ মে ছিল অধ্যাপক আবদুস সোবহানের শেষ কর্মদিবস।
ওইদিন তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী পদে ১৩৮ জনকে ‘অ্যাডহক’ (অস্থায়ী) ভিত্তিতে নিয়োগ দেন। তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনার মধ্যে পুলিশ পাহারায় উপাচার্য ভবন ছাড়তে হয়েছিল অধ্যাপক সোবহানকে।
এ নিয়োগকে কেন্দ্র করে সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংঘর্ষ হয়। একই দিনে ওই নিয়োগের কার্যকারিতা স্থগিত রেখে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মো. আলমগীরকে কমিটির প্রধান করা হয়।
এ তদন্ত কমিটি ২৩ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়; যেখানে ১৩৮ জনের নিয়োগকে সম্পূর্ণ অবৈধ উল্লেখ করে তা বাতিলের সুপারিশ করে। সেই সঙ্গে সোবহানসহ দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা এবং তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করে ওই তদন্ত কমিটি। এর চার মাস পর ৩১ অগাস্ট নিয়োগ বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পক্ষে রিট আবেদন করা হয়। প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছর ৬ মে রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট।
অন্তবর্তী আদেশে ১৩৮ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নিয়োগ তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০১৭ সালের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা কার্যকারিতাও স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
পদের অপব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৭৩ এর বিধান ও নিয়োগ নীতিমালা লঙ্ঘন করে এম আব্দুস সোবহানের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নিয়োগ কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। সেই সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চান হাইকোর্ট।
শিক্ষা সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও সাবেক উপাচার্য এম আব্দুস সোবহানকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এ রুল খারিজ করে পর্যবেক্ষণসহ রায় দিলেন উচ্চ আদালত।
আদালতের রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাবির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাসগুপ্ত। পরে রাবির আইনজীবী আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ রায়ের ফলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এখন ২০১৭ সালের সংশোধিত নিয়োগ বিধিমালার অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করতে পারবে।’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাসগুপ্ত বলেন, তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ১৩৮ জনের নিয়োগ বাতিল করেছিল রাবি কর্তৃপক্ষ। তবে এই ১৩৮ জন নতুন করে আবেদন করতে পারবেন।” আবেদন করলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট আইন-বিধি অনুসারে সেই আবেদন বিবেচনা করতে পারবেন বলে জানান এই আইন কর্মকর্তা।