নিজস্ব অনলাইন ডেস্ক:
স্বাধীনতার ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে বলার অপরাধে শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে জাতীয় সংসদে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এই প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, ইতিহাস বিকৃতকারী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে মিথ্যাচারকারীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে শাস্তির জন্য নতুন আইন পাস করা প্রয়োজন।
আজ রবিবার জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উত্থাপিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর বিশেষ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ প্রস্তাব করেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে মোজাম্মেল হক বলেন, ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ঘাতকরা শুধু একটা মানুষকে হত্যা করেনি, তারা একটি স্বাধীন সংসদকেই নয়, একটা জাতিকে হত্যা করেছিল। বাংলার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পদদলিত করেছিল। এসব ঘটনা চোখ মেলে দেখা দরকার, তা না হলে বারবার আমাদের হোঁচট খেতে হবে।
মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কয়েক দিন আগে বিএনপির এক নেতা বলেছেন, এর চেয়ে পাকিস্তান ভালো ছিল। তারা বলে, মহান মুক্তিযুদ্ধের নাকি কোনো প্রস্তুতি ছিল না। তাহলে সিক্রেট ডকুমেন্ট, প্রধানমন্ত্রী যা সংকলিত করেছেন সেসব যাবে কোথায়? তাহলে পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুকে অ্যান্টি পাকিস্তানি বলা হয়েছে, আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা, বিচ্ছিন্নতাবাদী বলা হয়েছে, বারবার জেলে নেওয়া হয়েছে; এসব ডকুমেন্ট তো আছে। তারা এখনো পাকপ্রেমী, এদের মাথা থেকে সেই পাকিস্তান প্রেম যায় নাই।
স্বাধীনতার ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, আমি শুনেছি ল’ কমিশন নাকি এ ধরনের একটি আইনের প্রস্তাবনা দিয়েছে। এ আইনটিকে যাতে জাতিকে সেফ গার্ডে রাখার জন্য এ সংসদে পাস করা যায়, সে আহ্বান জানাব। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু জেলহত্যা ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন, তিনিই দেশবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধীদের শাস্তির জন্য এ আইনটি করতে পারেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিতর্কিত করে তারা আবারও পাকিস্তান ঘরানার ধর্মীয় রাজনীতি চালু করতে চায়। এ দেশকে অকার্যকর করতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ল্যুজ কনফেডারেশন করে পাকিস্তান টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিল।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, তারা বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্ত করছে। শুধু তারা শুধু চক্রান্তই করছে না, যারা এ সংসদকে বিশ্বাস করে না, দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের মুখপাত্র হিসেবে তারা এ কাজ করছে। আমি মনে করি, সংসদ যেহেতু সমস্ত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু, তাই এখানে মিথ্যাচার-ইতিহাসের বিকৃতি, তারা যখনই সময় পায় তখনই সে প্রচেষ্টা চালায়। এই রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব আরো বেশি হুমকির মুখে পড়বে।