বিশেষ প্রতিবেদক:
কে হচ্ছেন বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি, জানা যাবে আজ (৭ ফেব্রুয়ারি)। এখন পর্যন্ত বঙ্গবভনের বাসিন্দা হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। যদিও রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে মসিউর রহমান। সংসদ সচিবালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় সাড়ে ৭টায় জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভা কক্ষে সংসদীয় দলের বৈঠক করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হবে আগামী দিনে কে হবেন বঙ্গভবনের বাসিন্দা।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলী ও সংসদীয় দলের একজন সদস্য বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতেই সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সপ্তম সংসদীয় দলের সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সেক্রেটারি ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী দলীয় এমপিদের যথাসময়ে সভায় উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, মসিউর রহমান আওয়ামী লীগ সভাপতির অত্যন্ত আস্থা ভাজন, বিশ্বস্ত একজন ব্যক্তি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কাজ করেছেন। নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাকে বিবেচনার অনেকগুলো যৌক্তিক কারণ রয়েছে।
ড. মসিউর রহমান ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি ইআরডি সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। আর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করলেও মসিউর রহমানকে অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে তিনি এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এ উপদেষ্টার বেশ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। যদিও পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে ড. মসিউর রহমানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছিল। পরে প্রমাণিত হয়েছে যে, পদ্মা সেতুতে কোনও দুর্নীতি হয়নি এবং এসবের সঙ্গে মসিউর রহমানের কোনো সম্পর্কই ছিল না।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এ রকম পরিস্থিতিতে মসিউরের মতো একজন আস্থাশীল-ক্লিন ইমেজের লোককে রাষ্ট্রপতি করলে আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে দেশের সুনাম বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অপর দিকে স্পিকার হিসেবে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালনকালে তিনি অনেকটা বিতর্কের বাইরে। বিশ্বস্ততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। এসব বিবেচনায় শিরীন শারমিন চৌধুরীর প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনাও বেশ আলোচনায়।
যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় সংসদের স্পিকারের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের মতো যোগ্য তেমন কেউ আর নেই। সে বিবেচনায় বর্তমান স্পিকারের ওপরই সংসদ পরিচালনায় আস্থা রাখছেন ক্ষমতাসীন দল।
আগামী ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হবে। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির পদে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। পরের দিন ১৩ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। একাধিক প্রার্থী থাকলে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে ভোট গ্রহণ হবে। সংসদ সদস্যরা ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেন।
সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচনের জন্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন। আর রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থীর সমর্থক ও প্রস্তাবক হতে হয় সংসদ সদস্যদের। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি প্রার্থী দেবেন না বলে এরই মধ্যে জানিয়েছে। আর সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীই নির্বাচিত হবেন। তাই মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার পাশাপাশি প্রস্তাবক ও সমর্থক কারা হবেন, সেটাও চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
অন্য দিকে জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী অন্য দলগুলোর রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এছাড়া এই দলগুলোর আসন সংখ্যাও খুবই কম। প্রার্থী দিলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোটে জেতার সম্ভাবনা নেই। আওয়ামী লীগ যাকে প্রার্থী করবে, তিনিই হবেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি- এটা নিশ্চিত। আর এ কারণেই রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগ কাকে প্রার্থী করবে বা মনোনয়ন দেবে সেটি নিয়েই আলোচনা চলছে।
গত কয়েক দিন ধরে দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি পদে দুটি নাম ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, বিভিন্ন সেক্টরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনীতি সচেতন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের নাম।
যেভাবে হবে নির্বাচন :
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। সংসদ সদস্যরাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটার। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নির্বাচনী কর্মকর্তার সামনে নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও নিজের স্বাক্ষর দিয়ে তা জমা দিতে হবে। এর মুড়ি অংশে স্বাক্ষর দিয়ে ভোটারদের ব্যালট পেপার সংগ্রহ করতে হবে। ভোট দেওয়ার পর সংসদ কক্ষে স্থাপিত এক বা একাধিক ব্যাটল বাক্সে তা জমা দিতে হবে। প্রত্যেক সংসদ সদস্যের একটি মাত্র ভোট থাকবে।
সংসদ সদস্য হিসেবে স্পিকারও এ নির্বাচনে ভোটার। ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদ কক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেওয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করবেন নির্বাচনি কর্মকর্তা। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিক সংখ্যক ভোটপ্রাপ্তকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে।
যদিও ১৯৯১ সালে পরোক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সাতবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একবার রাষ্ট্রপতি পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় সংসদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়। আর ওই সময় বিরোধীদল ও বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছিল বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীকে। ওই নির্বাচনে আব্দুর রহমান বিশ্বাস বিজয়ী হন। এছাড়া প্রতিবার একক প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর কমিশন গেজেটে নোটিফিকেশনের মাধ্যমে একক প্রার্থীকে নির্বাচিত ঘোষণা করে।