আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পাওয়া একটি মরদেহ বহন করার সময় একজন উদ্ধারকারীর প্রতিক্রিয়া। ছবি : ক্যান ইরোকে/এএফপি
তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বহু অংশে এক প্রবল ভূমিকম্পের পর শুধু তুরস্কেই মৃতের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৪৯৮ হয়েছে বলে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে। অন্যদিকে এএফপি জানিয়েছে, সিরিয়ায় ৮১০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তুরস্ক ও সিরিয়ায় এই ভূমিকম্পে মোট মৃতের সংখ্যা এখন দুই হাজার ৩০০-এরও বেশি।
দুটি দেশেই দুর্গত এলাকাজুড়ে এক বিশাল উদ্ধার অভিযান চলছে। তবে গ্রাম ও শহরগুলোতে উদ্ধারকর্মীদের ধ্বংসস্তূপ অনুসন্ধানের সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। হাজার হাজার মানুষ এই ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ১৯৩৯ সালের পর একে তার দেশের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
সিরিয়ায় নিহতদের মধ্যে অনেকেই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকায়। এই অঞ্চলটির সীমান্তের উভয় পাশে শিবিরগুলোতে লক্ষাধিক সিরীয় শরণার্থীর আবাসস্থল।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল তুরস্কের গাজিয়ানতেপ প্রদেশে। বিবিসি সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, সোমবার ভোররাতে গাজিয়ানতেপের কাছে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। তখন সব মানুষ ঘুমে ছিল।
প্রাথমিকভাবে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর বেশ কয়েকটি ‘আফটারশক’ হয়। স্থানীয় সময় আনুমানিক বেলা দেড়টায় সেখানে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার নতুন আরেকটি কম্পন আঘাত হানে। তবে কর্মকর্তারা বলেছিলেন, সেটা ‘আফটারশক’ না।
ভূমিকম্পে দুই দেশেই শত শত ভবন ধসে পড়ার পর ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষকে বাঁচাতে উদ্ধারকর্মীরা প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তুরস্ক সাহায্যের জন্য আন্তর্জাতিক আবেদন জানানোর পর বিশ্ব নেতারা সাহায্য পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ভূমিকম্পটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে তুরস্ক ও সিরিয়া ছাড়াও লেবানন, সাইপ্রাস এবং ইসরায়েল জুড়ে লাখ লাখ মানুষ এর কম্পন অনুভব করেন। এরপর তুরস্কের একই অঞ্চলে আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, যার কেন্দ্রস্থল ছিল কাহরামানমারাস শহরের কাছে।
দুর্গত এলাকা থেকে যেসব মর্মান্তিক ছবি পাওয়া যাচ্ছে তাতে বাসাবাড়ি ও সড়কে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া লোকদের সন্ধানকারী উদ্ধারকারী দলগুলোকে মরিয়া হয়ে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে, তুরস্কের ১০টি শহর ও প্রদেশের স্কুল এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি হাতায়, মারাশ এবং আন্তেপের বিমানবন্দরগুলো বন্ধ বা আংশিকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।
সিরিয়ায় কি হচ্ছে?
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল প্রতিবেশী তুরস্কে হলেও সিরিয়াতেও বহু শত মানুষ মারা গেছে।
এই দুর্যোগের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ভিডিও এবং ছবি উঠে আসছে। আলেপ্পোর উত্তর-পশ্চিমে এক শহর থেকে পাওয়া এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ভবনগুলো ধসে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধুলোর বিশাল মেঘের মধ্য দিয়ে বাসিন্দারা পালিয়ে যাচ্ছে এবং চিৎকার করছে।